চেনা পাখির অচেনা চরিত্র

প্রকাশঃ জুন ১০, ২০১৫ সময়ঃ ১২:১৮ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৮:২০ পূর্বাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডট কম:

PurpleGallinule‘বহু পথ ঘুরে বহু ক্রোশ দূরে
দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা,
দেখিতে গিয়াছি সিন্ধু
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শীষের ওপর একটি শিশির বিন্দু।’

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চমৎকার এই কবিতার আবেদন কখনো ফুরাবার নয়। ইন্টারনেটের এই যুগে মুহূর্তের মধ্যেই পৃথিবীর সব প্রান্ত থেকে ঘুরে আসা যায়। কিন্তু বাড়ির পাশের গাছের ছোট্ট টুনটুনিটির খবর তেমন করে রাখা হয়না । শোনা হয়না তার মিষ্টি গানের সুর। অনেকের কাছে এক প্রকার অবহেলায় থেকে যায় আমাদের দেশের এসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। অথচ আমাদের দেশের বৈচিত্র্যময় এসব পাখিদের জীবনেও আছে অনেক মজার মজার ঘটনা। এবার তবে চলুন চেনা কিছু পাখির অজানা চরিত্রের কথা জেনে নিই।

বাচ্চা ডাহুকের বুদ্ধিঃ

আমাদের দেশে যে ক’টি পাখি ডাকের জন্য বিখ্যাত তাদের মধ্যে ডাহুক অন্যতম। প্রয়াত সাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদ ডাহুকের ডাককে লালন ফকিরের গানের সাথে তুলনা করেছেন। ডাহুক অনেক সময় পোষও মানে। এই অনুগত পোষা পাখিটি দিয়ে অনেকে বুনো ডাহুকও শিকার করে। সারা বছর ডাহুকের ডাকাডাকি তেমন শোনা না গেলেও বর্ষাকালে এরা বেশি ডাকাডাকি করে। আষাঢ়- শ্রাবণ মাস এদের প্রজনণকাল। জলাশয়ের ধারে ঝোপের মধ্যে এরা বাসা বানায়। মেয়ে পাখিটি ৬-৭টি ডিম দেয়। স্বামী স্ত্রী মিলে ডিম তা দেয়। তবে অদ্ভুত ব্যাপার হলো এ পাখির বাচ্চাগুলো কালো রঙের। পোকামাকড়, শামুক, উদ্ভিদের ডগা, শস্যদানা এদের প্রিয় খাবার। তবে বাচ্চার খাবার গ্রহণের সময় ঘটে সবচেয়ে মজার ঘটনা। অন্য বেশিরভাগ পাখিরা তাদের বাচ্চাকে মুখে তুলে খাইয়ে দেয়। কিন্তু মা ডাহুকী কখনও বাচ্চাদের তুলে খাওয়ায় না। তাহলে কীভাবে খায় ওরা? ডিম থেকে বাচ্চা বের হবার সাথে সাথে প্রাকৃতিক নিয়মেই বাচ্চাগুলো ২০ ফুট উঁচু থেকে লাফ দিয়ে নামে মাটিতে। শরীরটা পাতলা বলে লাফ দিয়ে মাটিতে পড়লেও তাদের কিছুই হয় না। মাটিতে নেমেই বাচ্চাগুলো মা বাবার পেছনে পেছনে হেঁটে হেঁটে খাবার খুঁটে খুঁটে খায়।

মেয়ে দলপিপির আজব স্বভাবঃ

Dalapipi Birdদলপিপি খুবই বুদ্ধিমান পাখি। এরা প্রজনণের সময় এমনভাবে বাসা বানায় যেন তাদের আশেপাশে থাকা মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী সহজে বুঝতে না পারে। তারা যে ডিম পারে তাও ব্রোঞ্জ ও বাদামী ফোঁটা মেশানো থাকে যাতে কোন শত্রু বুঝতেই না পারে এগুলো ডিম। পাখি জগতে সাধারণত ডিমে তা দেয়া ও বাচ্চাদের দেখাশোনার দায়িত্ব স্বামী-স্ত্রী দু’জনে মিলেই করে। কিন্তু এদের জীবনচক্রে একটু ভিন্নতা দেখা যায়।

স্ত্রী পাখিটা একই মৌসুমে চার পাঁচবার পর্যন্ত ডিম দিতে পারে। মেয়ে দলপিপি প্রজনণ মৌসুমে চার-পাঁচটি পুরুষ পাখির সাথে জোড় বাঁধে। এক জায়গায় ডিম দিয়ে অন্য আরেক পুরুষের কাছে চলে যায়। পুরুষ পাখিটির কাজই হল ডিমে তা দেয়া।

এখন প্রশ্ন হল, মেয়ে পাখিটি ডিমে তা দিচ্ছে না কেন? এর উত্তর হল, মেয়ে পাখিটি একজায়গায় একই সাথে সব ডিম পেড়ে একসাথে সব ডিম নষ্ট করতে চায়না। শত্রুর ভয়ে সে একই মৌসুমে বিভিন্ন জায়গায় ডিম দেয়। আর এ কারণেই সে বেশ ক’টি পুরুষের সাথে জোড় বাঁধে। বাংলাদেশে জাকানিডি পরিবারের ২ প্রজাতির পাখি দেখা যায়। দলপিপি ও নেউপিপি। এর মধ্যে দলপিপির উপস্থিতি সচরাচর চোখে পড়ে। এদের মাথা, গলা, বুক চকচকে কালো। তবে চোখের পাশ থেকে চওড়া একটা সাদা দাগ আছে যা তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।

লড়াকু স্বভাবের বাংলা বুলবুলঃ

BulbuliBirdবুলবুলির শান্ত মেজাজটা শুধু চোখে পড়লেও এদের লড়াকু স্বভাবেরও ঐতিহ্য আছে। একসময় এরা রাজা বাদশা ও বাবুদের পোষা পাখি ছিল। বছরের বিভিন্ন সময় তাদের ট্রেনিং দেয়া হতো প্রতিযোগিতার জন্য। কলকাতার বাবুদের ঘুড়ি ওড়ানো আর বুলবুলিরর লড়াই আগের দিনে খুবই উপভোগের একটা বিষয় ছিল ।

বছরের নির্দিষ্ট সময়ে বহু লোকের সমাগমে বুলবুলির লড়াই হতো। যার বুলবুলি লড়াই-এ জিততো সে পেতো মোটা অংকের পুরষ্কার। মোঘল আমলে এই প্রচলনটা বেশ ছিল। বাংলাদেশে পিকনোটিডি পরিবারের বুলবুল পাখি আছে ৯ প্রজাতির। এদের মধ্যে বাংলা বুলবুল আমাদের দেশের সর্বত্রই দেখা যায়।

পরের ঘরে মানুষ হওয়া কোকিল ছানাঃ

CuckooBirdপরনির্ভরশীল পাখির কথা বললে প্রথমেই কোকিলের কথা আসে। কোকিল কখনও বাসা বাঁধে না। এরা অন্য পাখির বাসায় ডিম পাড়ে বিশেষ করে পাতি কাক, বুলবুলি, বাঘাটিকি, বনছাতারে এমনকি বসন্তবৌরির বাসায়ও ডিম পাড়ে। তবে পরজীবী পাখি হলেও বসন্তকালে এদের বিশেষ ডাকের কারণে সবার কাছেই পরিচিত এই পাখি।

কোকিলের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার পর পরই অন্য ডিম বা বাচ্চা ফেলে দেয় বাসার মালিক পাখিরা। কালা কোকিল সবচেয়ে বেশি ডিম পাড়ে কাকের বাসায়। কোকিল ও কাকের ডিম পাড়ার সময় এপ্রিল-আগষ্ট মাসে।

এসময় কাকের ডিমে তা দেবার সময়। বাসার চারদিকে পুরুষ কোকিল ঘুরঘুর করে কাককে রাগান্বিত করে। কাক কোকিলকে তাড়া করে আর সে এ সুযোগে মেয়ে কোকিল কাকের বাসায় ডিম পেড়ে আসে। কাক যেন টের না পায় সেজন্য তার কয়েকটি বা সবকটি ডিম ফেলে দিয়ে ডিম পাড়ে। অথবা কাক যখন সামান্য সময়ের জন্য বাসা ছেড়ে যায় তখনই কোকিল ডিম দেয়। বোকা কাক কিছু বুঝতে পারে না। সে নিজের ডিমের সঙ্গে কোকিলের ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোঁটায়।

প্রতিক্ষণ/এডি/পাভেল

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G